মেঘালয় ট্যুর-Meghalaya Tour Guide & Best Tour Plan

ঢাকা থেকে মেঘালয় ট্যুর সম্পূর্ণ গাইডলাইন

স্বাগতম সবাইকে!
আজ আমরা ভারতের মেঘালয় ভ্রমন (Meghalaya Tour) সম্পর্কে জানবো। মেঘালয়ের ভৌগলিক বৈচিত্র্য রাজ্যটিকে বিশেষভাবে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। এটি হিমালয়ের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে গড়ে ৪,৯০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। এখানে খাসি, গারো এবং জয়ন্তিয়া পাহাড় তিনটি প্রধান পর্বতশ্রেণী হিসেবে বিদ্যমান। রাজ্যের ভৌগলিক বৈশিষ্ট্যের মধ্যে উঁচু পাহাড়, উপত্যকা, জলপ্রপাত এবং নদীগুলির প্রাধান্য রয়েছে।

Meghalaya tour

মেঘালয় ট্যুর-Meghalaya Tour Guide

ভৌগোলিক অবস্থান এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যঃ

মেঘালয়, যার অর্থ “মেঘের আবাস”, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত একটি রাজ্য, যা তার অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, মনোরম পাহাড়, নদী এবং জলপ্রপাতের জন্য বিখ্যাত। এই রাজ্যটি আসামের দক্ষিণে এবং বাংলাদেশের উত্তরে অবস্থিত। মেঘালয়ের অবস্থান এবং প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য এই অঞ্চলের ভূগোলকে অনন্য বৈশিষ্ট্য প্রদান করেছে, যা প্রতিবছর অনেক পর্যটককে আকর্ষণ করে। মেঘালয় প্রায় ২২,৪২৯ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এবং উচ্চ পাহাড়, গভীর উপত্যকা, আর ঘন সবুজ অরণ্যে পরিপূর্ণ। এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে গড়ে ৪,৯০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। মেঘালয়ে তিনটি প্রধান পর্বতশ্রেণী রয়েছে—খাসি, গারো এবং জয়ন্তিয়া পাহাড়। রাজ্যের অনেক অঞ্চল থেকে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ ভূমি দেখা যায়, যা এক মনোরম দৃশ্যপট তৈরি করে।

সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যঃ

মেঘালয়ের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য অত্যন্ত সমৃদ্ধ ও বৈচিত্র্যময়, যা মূলত খাসি, গারো এবং জয়ন্তিয়া এই তিনটি প্রধান উপজাতির জীবনধারা, আচার-অনুষ্ঠান এবং বিশ্বাসের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়। এই উপজাতিদের নিজস্ব ভাষা, নৃত্য, সঙ্গীত এবং ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান রয়েছে, যা মেঘালয়কে একটি বিশেষ সাংস্কৃতিক পরিচয় প্রদান করে।

নদী এবং জলপ্রপাতঃ

মেঘালয়ে অনেকগুলি ছোট-বড় নদী এবং জলপ্রপাত রয়েছে, যা স্থানীয় গ্রামগুলিকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে যুক্ত করেছে। বড় নদীগুলোর মধ্যে উমগট, সুরমা, কাইন প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। জলপ্রপাতগুলোর মধ্যে এলিফ্যান্ট ফলস, সেভেন সিস্টার ফলস, নোহকালিকাই ফলস প্রধান।

মেঘালয়ের খাবারঃ

মেঘালয়ের খাবার সংস্কৃতি এর প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং স্থানীয় ঐতিহ্যের গভীর প্রতিফলন। এখানকার প্রধান উপজাতি গোষ্ঠীগুলি—খাসি, গারো, ও জয়ন্তিয়া—তাদের নিজস্ব স্বাদ এবং রন্ধনশৈলী নিয়ে বিভিন্ন মুখরোচক খাবার তৈরি করে থাকে। মেঘালয়ের খাবারে স্থানীয় উপাদান, যেমন বাঁশের শুট, স্থানীয় মশলা এবং বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি ব্যবহৃত হয়। এই অঞ্চলের জনপ্রিয় খাবারগুলির মধ্যে জাদো (শুকরের মাংস ও চাল), দোহনেইং (গরুর মাংসের স্যুপ), এবং তুঙরাইংবাই (বাঁশের শুট ও মাংসের সংমিশ্রণ) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। পাশাপাশি এখানকার ঐতিহ্যবাহী পানীয় তাংমুরি এবং কাইআদ উৎসবে ও সামাজিক অনুষ্ঠানে পরিবেশন করা হয়। মেঘালয়ের খাবারগুলো সাধারণত তেল-মশলা কম, তবে স্বাদে অনন্য, যা এখানকার প্রাকৃতিক ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের প্রতিফলন।

Nohkalikai Falls Meghalaya

Nohkalikai Falls Cherrapunji Meghalaya

**মেঘালয়ের ইতিহাস**

মেঘালয়ের ইতিহাস অনেক প্রাচীন এবং বৈচিত্র্যময়। এই রাজ্যের মূল উপজাতি খাসি, গারো ও জয়ন্তিয়া জনগোষ্ঠী দীর্ঘকাল ধরে এখানে বসবাস করে আসছে। তাদের সমাজ ব্যবস্থায় মাতৃতান্ত্রিক প্রথা রয়েছে, যেখানে মায়ের অধিকারেই সম্পত্তি এবং উত্তরাধিকারী বিষয়গুলি নির্ধারিত হয়। মেঘালয়ের প্রতিটি পাহাড়, উপত্যকা, আর ঝরনার সাথে ইতিহাসের গভীর মেলবন্ধন রয়েছে, যা এখানকার মানুষের জীবনযাত্রার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।

ব্রিটিশ শাসনের আগের সময়
মেঘালয়ের এই উপজাতিগুলি নিজেদের শাসন ব্যবস্থার মাধ্যমে পরিচালিত হত। তারা স্বাধীন এবং আত্মনির্ভরশীল ছিল, এবং তাদের নিজস্ব ধর্ম, উৎসব, এবং সামাজিক রীতিনীতি মেনে চলত। প্রকৃতির প্রতি গভীর ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা তাদের জীবনধারার অংশ ছিল, এবং তারা মাটি, নদী ও পাহাড়কে দেবতাদের আবাসভূমি হিসেবে মনে করত।

ব্রিটিশ শাসন এবং প্রতিরোধ
১৮৩৫ সালে ব্রিটিশরা উত্তর-পূর্ব ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের মতো মেঘালয়কেও দখল করার চেষ্টা করে। আসামের অংশ হিসেবে মেঘালয় ব্রিটিশদের নিয়ন্ত্রণে আসে, কিন্তু স্থানীয় জনগোষ্ঠী এই বিদেশী শাসন মেনে নিতে প্রস্তুত ছিল না। খাসি নেতা উ তিরোৎ সিং এর মতো অনেক নেতারা ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। ১৮২৯ সালে এই বিদ্রোহের শুরু হয়, যা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে স্থানীয় জনগণের শক্তিশালী প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে আছে। যদিও বিদ্রোহ দমন করা হয়, তবুও উ তিরোৎ সিং-এর সাহসিকতা মেঘালয়ের মানুষের হৃদয়ে আজও জীবন্ত।

স্বাধীনতার পরে
ভারত স্বাধীন হওয়ার পর মেঘালয় আসামের অংশ হিসেবেই রয়ে যায়। তবে মেঘালয়ের জনগণের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল তাদের নিজস্ব স্বতন্ত্র পরিচয়। ১৯৬০-এর দশকে স্বতন্ত্র রাজ্যের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়, এবং অবশেষে ১৯৭২ সালের ২১ জানুয়ারি মেঘালয় আলাদা রাজ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই অর্জন এখানকার মানুষের স্বাধীনতাকামী চেতনাকে সম্মানিত করে এবং শিলংকে মেঘালয়ের রাজধানী হিসেবে স্থাপন করা হয়।

আধুনিক মেঘালয়
আজ মেঘালয় তার সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত। এখানকার খাসি, গারো ও জয়ন্তিয়া জনগোষ্ঠী তাদের সংস্কৃতি, রীতিনীতি এবং মাতৃতান্ত্রিক সামাজিক প্রথা ধরে রেখেছে। পর্যটন, খনিজ সম্পদ এবং কৃষিকাজ মেঘালয়ের অর্থনীতির মূল ভিত্তি, তবে এই রাজ্যের মানুষের জীবনযাপন, বিশ্বাস এবং ঐতিহ্যের সাথেই জড়িয়ে আছে তার ইতিহাসের গৌরব।

মেঘালয়ের ইতিহাস শুধুই ঘটনাবহুল নয়; এটি এর সংস্কৃতি, সংগ্রাম, এবং প্রকৃতির সঙ্গে গভীরভাবে সংযুক্ত। প্রতিটি নদী, পাহাড়, আর উপত্যকার সাথেই মিশে আছে মানুষের বেঁচে থাকার গল্প, এবং সেই গল্প আজও এখানে বেঁচে আছে।

Mawsmai Cave Cherrapunji Meghalaya

Mawsmai Cave Cherrapunji Meghalaya

MeghalayaTour-মেঘালয় ভ্রমনে নিজেই করুন ইন্ডিয়ান ট্যুরিস্ট ভিসা!

ঢাকা থেকে মেঘালয় সম্পূর্ণ ভ্রমন গাইড এবং বিস্তারিত পাবেন আমার মেঘালয় ভ্রমন ভিডিও থেকে। আমি ২০২৪ এর নভেম্বার মাসে ভ্রমন সম্পূর্ণ করি । ঢাকা-মেঘালয়-ঢাকা ৪রাত ৩দিন এর মোট খরচ ছিল ৮,২০০ টাকা (ভিসা+ব্যাক্তিগত খরচ নিজের) কোন রকম ঝামেলা ছাড়া। লাক্সারি ট্যুর এর জন্য আপনার আনুমানিক ১৪-২০ হাজার টাকাই যথেষ্ট। বাজেট ট্যুরের জন্য ৮-১০ হাজারেই সম্ভব (আমাদের টাকার মানের উপর নির্ভর করছে পরবর্তীতে কেমন খরচ হবে)।
ঢাকা থেকে মেঘালয় সম্পূর্ণ ট্যুর গাইডলাইন | Meghalaya Tour Guide | Meghalaya Tour

বিস্তারিত জানতে সম্পূর্ণ ভিডিও দেখুন।

মেঘালয় ট্যুর ভিডিও-Meghalaya Tour Guide Video

ঢাকা থেকে মেঘালয় সম্পূর্ণ ট্যুর গাইডলাইন

**৪ রাত ৩ দিনের ট্যুর প্লান**

ঢাকা থেকে মেঘালয় ডাউকি-শিলং-চেরাপুঞ্জি ভ্রমণের ৪রাত ৩দিনের আইটিনারিঃ

ঢাকা - সিলেট
রাত্রি যাত্রা: ঢাকা থেকে সিলেট যাত্রা শুরু হবে ট্রেনে । রাতের ভ্রমণের সময় আপনারা বাস/ট্রেনে থাকবেন। (বাস/ট্রেন আপনাদের যেটা সুবিধা হয় সেইভাবেই যাবেন)
রাত্রিযাপন: বাস/ট্রেন।
১ম দিন: ডাউকি - শিলং
সকালে পৌঁছানো: খুব সকালে সিলেট পৌঁছাবেন। তারপর সেখান থেকে হুমায়ুন রশিদ চত্তর/সোবহানীঘাট থেকে বাসে করে তামাবিল বর্ডার যেতে হবে। আপনারা ৩/৪ জন একসাথে থাকলে একটা সিএনজি করে সরাসরিও যেতে পারেন।
ইমিগ্রেশন: তামাবিল ও ডাউকি ইমিগ্রেশন কার্যক্রম শেষ করে শিলং এর উদ্দেশ্যে রওনা হবেন প্রাইভেট কার/জীপে করে সাইট সিন দেখতে দেখতে। উমগোট নদী,ডাউকি সেতু,মাওলিননং ক্লিন ভিলেজ,লিভিং রুট ব্রিজ ইত্যাদি।
শিলং পৌঁছানো: সন্ধ্যার মধ্যে/রাতে শিলং পৌঁছাবেন। হোটেলে চেক-ইন করে ফ্রেশ হবেন। সন্ধ্যায় শিলং শহর ঘুরে দেখবেন এবং নিজেদের মতো সময় কাটাবেন।
রাত্রিযাপন: শিলং হোটেল।
২য় দিন: শিলং - চেরাপুঞ্জি
সকালে যাত্রা: সকালের নাস্তা করে চেরাপুঞ্জির উদ্দেশ্যে রওনা হবেন।
চেরাপুঞ্জি: চেরাপুঞ্জি বিভিন্ন সাইট সিন। নোহকালিকাই জলপ্রপাত,সেভেন সিস্টার ফলস,মাওস্মাই গুহা ইত্যাদি।
ফিরতি যাত্রা: শিলং ফিরে হোটেলে লাঞ্চ সেরে বিশ্রাম নেবেন।
বিকেলের কার্যক্রম: বিকেলটা ফ্রি টাইম বা স্থানীয় বাজারে শপিং করতে পারেন।
রাত্রিযাপন: শিলং হোটেল।
৩য় দিন: শিলং - ডাউকি
সকালে যাত্রা: সকাল ৮টার মধ্যে ডাউকির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করবেন।
পথের দৃশ্য: যাত্রাপথে সাইট সিন করবেন (যদি সময় থাকে)।
ইমিগ্রেশন: আপনাদের অবশ্যই বিকাল ৫টার মধ্যে ইমিগ্রেশন শেষ করতে হবে না হলে ঐ রাত ডাউকিতেই থাকতে হবে।
তামাবিল বর্ডার থেকে ঢাকা: রাতের ভ্রমণের সময় আপনারা বাস/ট্রেনে থাকবেন।
ঢাকা পৌঁছানো: রাতে/ভোরে ঢাকায় পৌঁছাবেন এবং ভ্রমণের সমাপ্তি।

খরচঃ লাক্সারি ট্যুর এর জন্য আপনার আনুমানিক ১৪-২০ হাজার টাকাই যথেষ্ট। বাজেট ট্যুরের জন্য ৮-১০ হাজারেই সম্ভব (আমাদের টাকার মানের উপর নির্ভর করছে পরবর্তীতে কেমন খরচ হবে)।

এই ট্রাভেল আইটিনারি আপনার ভ্রমণকে স্মরণীয় করে তুলবে এবং সুন্দর দৃশ্য ও সংস্কৃতি উপভোগ করার সুযোগ দিবে। আশা করি এটি আপনার পরিকল্পনার সাথে মিলে যাবে।

নিজেই করুন ইন্ডিয়ান ট্যুরিস্ট ভিসা!

সামাজিক মাধ্যমের লিঙ্ক সমূহঃ

ফেসবুক: 👆এখানে ক্লিক করুন👆

ইনস্টাগ্রাম: 👆এখানে ক্লিক করুন👆

টুইটার: 👆এখানে ক্লিক করুন👆

লিঙ্কডইন: 👆এখানে ক্লিক করুন👆

ইউটিউব: 👆এখানে ক্লিক করুন👆

ঢাকা থেকে মেঘালয় সম্পূর্ণ ট্যুর গাইডলাইন | Dhaka to Meghalaya | Dhaka to Meghalaya Tour by Road | Dhaka to Shillong । Meghalaya Tour Guide । Meghalaya Tour

2 thoughts on “মেঘালয় ট্যুর-Meghalaya Tour Guide & Best Tour Plan”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top